Quantcast
Channel: Anthropology – Bangladesh Study Forum
Viewing all articles
Browse latest Browse all 29

সেমিওলজি ও ঈশ্বর-প্রথম পর্ব

$
0
0

 

লেখক, সমালোচক ও ভাষাতাত্ত্বিক শিশির ভট্টাচার্য্যের গুরুত্বপূর্ণ বই ‘ঈশ্বর ধর্ম বিশ্বাস’ এর প্রথম অধ্যায় ‘সেমিওলজি ও ঈশ্বর’ এর প্রথম অংশ নিচে দেওয়া হলো:

বস্তু ও তার চিহ্ন

মানুষের চারপাশের বস্তুময় জগৎ ও মস্তিষ্কের জগৎ পুরোপুরি আলাদা। মানব মস্তিষ্কে বস্তু নেই, আছে বস্তুর এক রকম ছবি বা মূর্তি। আপনি দেখছেন বা শুনছেন: ‘খোকা কলা খাচ্ছে’। ব্যক্তি খোকা বস্তু কলাটা কামড়ে কামড়ে মুখে নিচ্ছে। গবগব গলুট। কলাটা ধীরে ধীরে চলে গেল খোকার পেটে। খোসাটা পড়ে রইল খোকার হাতে। আপনার চোখের সামনে কদলি ভক্ষণের এই কা-টি যখন ঘটতে থাকে তখন আপনার মস্তিষ্ক কেমন করে তা বোঝে? আপনার মস্তিষ্কে তো খোকাও নেই, কলাও নেই। তারা আছে বাস্তবে। আপনার মস্তিষ্কে সৃষ্টি হয়েছে ১. ব্যক্তি ‘খোকা’, ২. বস্তু ‘কলা’ ও ৩. ক্রিয়া ‘খাওয়া’র তিন তিনটি আলাদা আলাদা ছবি বা মূর্তি। আপনার চোখের সামনে বাস্তবের খোকা যখন কলা খাওয়া শেষ করছে তখন আপনার মস্তিষ্কে খোকার মূর্তির পেটে যাচ্ছে কলার মূর্তি। খোকার মূর্তির হাতে ঝুলে আছে খোসার মূর্তি।

অদ্ভুত লাগছে শুনতে তাই তো? সিনেমা বা টেলিভিশনে যখন কাউকে কলা খেতে দেখেন তখন আপনার সামনে আসলেই কেউ কলা খায় না। কলা খাওয়ার ছবিটা শুধু দৃশ্যমান হয় রূপালী পর্দায়। তবে রূপালী পর্দার ছবি বা বাস্তবের কোনো মূর্তির সাথে মস্তিষ্কে সৃষ্টি হওয়া নিওরোলজিক্যাল ছবি বা মূর্তির তফাৎ আছে। পর্দার শাবনূর বাস্তবের শাবনূরের অবিকল প্রতিরূপ। কোনো শিল্পী যদি খোকার একটি মূর্তি নির্মাণ করেন পাথর, মাটি বা প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে তবে তা হবে বাস্তবের খোকার কমবেশি মূর্ত বা ‘ফিগারেটিভ’ প্রতিরূপ। মস্তিষ্কের মূর্তি সম্ভবত সে রকম কিছু নয়। এই মূর্তিটি খোকার অবিকল প্রতিরূপ হওয়া দূরে থাক, আদৌ কোনো প্রতিরূপ কিনা তাও আমরা জানি না। যা জানি তা হচ্ছে এই: খোকার একটি প্রতিরূপ তৈরি হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কে। প্রতিরূপটি যে খোকারই তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু তার সাথে বাস্তবের খোকার সাদৃশ্য কতটুকু সেটা ভবিষ্যৎ গবেষণায় জানা গেলেও যেতে পারে।

একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। কম্পিউটারের পর্দায় আপনি দেখছেন একটি অক্ষর: ‘ক’। কম্পিউটারের স্মৃতিতে ‘ক’ হচ্ছে বিদ্যুৎকণার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির একটি বিশেষ সমষ্টি। একই ভাবে ‘প’ বিদ্যুৎকণার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির অন্য একটি সমষ্টি। পর্দার ‘ক’ একটি মূর্তি। কিন্তু পর্দার পিছনের বৈদ্যুতিন বা ইলেক্ট্রনিক ‘ক’ একদিক থেকে চিন্তা করলে মূর্তি, আবার অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে মূর্তি নয়। মস্তিষ্কের মূর্তি কম্পিউটারের ‘ক’-এর মতো করে সৃষ্টি হয় কিনা তা আমরা এখনও জানি না। অন্ততপক্ষে মূর্তি বলতে আমরা বাস্তবে যা বুঝি তার সাথে মস্তিষ্কে সৃষ্টি হওয়া মূর্তির তফাৎ আছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

যে কলা কিলোদরে বা ডজন হিসেবে দোকানে বা বাজারে বিক্রি হয় (অর্থাৎ হলুদ রঙের বাঁকানো যে বিশেষ ফলটিকে হাত দিয়ে ধরা যায়, নাকে নিলে একটি বিশেষ ‘কলাটে’ গন্ধ পাওয়া যায়) তাকে আমরা বলব কলা’র ‘নির্দেশিত’ বা Referent । দোকানের তাকে বা দড়িতে এই রেফারেন্ট বা নির্দেশিত ঝুলতে দেখে আপনার মস্তিষ্কে একটি ছবি ভেসে উঠে। এই ছবিটির পোষাকী নাম ‘দ্যোতিত’ বা Signified। মানুষের মস্তিষ্ক বলে কোনো কথা নয়, যে কোনো ধরনের মস্তিষ্কেই দ্যোতিত সৃষ্টি হতে পারে। একটা কুকুরের সামনেও যদি আপনি একটি মাংসের টুকরা ছুঁড়ে দেন তবে কুকুরটি তা তৎক্ষণাৎ চিনতে পারবে এবং মুখে নিয়ে খাওয়া শুরু করবে। সেই একই কুকুরের সামনে আপনি একটি কলা ফেলে দেখুন, সে ছুঁয়েও দেখবে না। এর মানে হচ্ছে এই যে নির্দেশিত দেখে বা শুঁকে কুকুরের মস্তিষ্কেও দ্যোতিত সৃষ্টি হয়।

নির্দেশিত আর দ্যোতিত এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটি আশা করি পরিষ্কার হয়েছে। এটুকু মনে রাখলেই চলবে যে ‘নির্দেশিত’ হচ্ছে বাস্তবের বস্তু, আর ‘দ্যোতিত’ হচ্ছে মস্তিস্কে সৃষ্টি হওয়া একটি ছবি বা মূর্তি।

 

প্রতিমা, প্রতীক ও সঙ্কেত

মানুষের ‘মাংস’ বা ‘কলা’ দেখার দরকার নেই। ‘মাংস’, ‘কলা’ ইত্যাদি শব্দ শুনলে বা এই কথা দু’টি কোথাও লেখা আছে দেখলেই মানব মস্তিষ্কে দ্যোতিতের সৃষ্টি হয়। ‘কলা’ শব্দটার মধ্যে কি আছে? আছে কতগুলো ধ্বনি। ‘ক’, ‘অ’, ‘ল’ আর ‘আ’- এই চার রকমের চারটা ধ্বনি। ধ্বনি চারটি বিশেষ একটি ক্রমে সাজানো থাকলেই শুধু ‘কলা’র বোধ জন্মাবে মস্তিষ্কে, অন্যথায় নয়। ধ্বনি চারটিকে একটু ওলটপালট করে যদি বলেন ‘লকা’ তবে কিন্তু কোনো দ্যোতিতই সৃষ্টি হবে না মস্তিষ্কে। ‘লকা’ বললে কোনো বাঙালিই কিছু বুঝবে না। এই যে এক বা একাধিক ধ্বনি বিশেষ একটি ক্রমে সাজিয়ে নতুন একটি ধ্বনিবস্তু তৈরি হলো তার নাম ‘দ্যোতক’ বা Signifier। দ্যোতক’ তৈরি হতে পারে ধ্বনি দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, এমনকি আঁকাও যেতে পারে দ্যোতককে। উচ্চারিত ‘কলা’ ধ্বনি-দ্যোতক, লিখিত ‘কলা’ লিপি-দ্যোতক আর কলার ফটোগ্রাফ বা আঁকা ছবি বা নির্মিত মূর্তি হবে প্রতিমা-দ্যোতক।

মস্তিষ্কে সৃষ্টি হওয়া দ্যোতিত ছবি বা মূর্তি কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও দ্যোতক যে একটি মূর্তি তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। ‘কলা’ এবং ‘কলার ছবি’ এক কথা নয়। কলা খাওয়া যায়, কলার ছবিতে পেট ভরে না। কানের কাছে হাজার বার ‘কলা’ শব্দটা উচ্চারিত হলেও তাতে কলার স্বাদ বা গন্ধ পাওয়া যায় না। কলার ১. ধ্বনিগত ছবি, ২. লেখা ছবি, ৩. আঁকা ছবি এবং ৪. আলোকচিত্র চার ধরনের চারটি আলাদা মূর্তি। ধ্বনিগত ছবির সাথে আঁকা বা আলোকচিত্রের পার্থক্য আছে। যদিও কলার আলোকচিত্রের সাথে বাস্তবের কলার সাদৃশ্য কলার অঙ্কিত চিত্রের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি, তবু এ কথা বলা যায় যে কলার আঁকা ছবি আর আলোকচিত্র কলার কমবেশি অবিকল প্রতিরূপ। যদি কোনো মূর্তি বা ছবির সাথে দ্যোতিতের এ ধরনের অবিকল সাদৃশ্য থাকে তবে সে মূর্তিটিকে আমরা বলব ‘প্রতিমা’ (Icon)। ‘প্রতিমা’ হচ্ছে বস্তুর কমবেশি অবিকল প্রতিরূপ। কলার প্রতিমা দেখে দুনিয়ার সব মানুষই তাকে ‘কলা’ বলে চিনতে পারবে তা যে ভাষাভাষীই সে হোক না কেন যে দেশেই সে থাকুক না কেন।

‘কলা’র প্রতিমার সাথে ‘কলা’র ধ্বনিমূর্তির একটি পার্থক্য আছে। ‘ক্-অ-ল্-আ’ ধ্বনিসমষ্টির সাথে ‘কলা’ নামক ফলটির কোনো প্রকার সম্পর্ক প্রমাণ করা যাবে না। সম্পর্ক নেই তার প্রমাণ একই ‘কলা’র ধ্বনিমূর্তি এক এক ভাষায় এক এক রকম। কোনো ভাষায় ‘কলা’, কোনো ভাষায় ‘ব্যানানা’, কোনো ভাষায় ‘কদলি’। এসব ধ্বনিমূর্তির সাথে ‘কলা’ বস্তুটির সম্পর্ক নেই, আবার সম্পর্ক আছেও। সম্পর্ক যদি না থাকত তবে ‘কলা’ শব্দটি শুনলে বাংলাভাষীর মস্তিষ্কে ‘কলা’র বোধ জন্মাত না। কিভাবে এ সম্পর্কের সৃষ্টি তা আমরা জানি না তবে এতটুকু জানি যে এ সম্পর্ক কাকতালীয়, আপতিক বা Arbitrary যার ইংরেজি তদ্ভব প্রতিশব্দ হতে পারে ‘আবিত্রিক’। দ্যোতক আর দ্যোতিতের সম্পর্কটি যদি আর্বিত্রিক হয় তবে সেই সম্পর্কের ফলে সৃষ্টি হবে একটি ‘সংকেত’ (Sign)। একে ‘চিহ্ন’ বলা যেতে পারত কিন্তু আমরা তা বলব না, কারণ ‘চিহ্ন’ শব্দটিকে আমরা ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহার করব। ধ্বনিমূর্তি, লিপিমূর্তি, প্রতিমা, সঙ্কেত … সবই বিভিন্ন ধরনের ‘চিহ্ন’।

একজন বাঙালি যখন উচ্চারণ করে ‘কলা’ তখন সে একটি ধ্বনিদ্যোতক সৃষ্টি করে। কিন্তু এই দ্যোতক ফরাসি-ভাষীর মস্তিষ্কে কোনো দ্যোতিতই সৃষ্টি করতে পারে না। সুতরাং ‘কলা’ শব্দটি শুনে কোনো ফরাসি কিছুই বোঝে না। কিন্তু ফরাসি যে কলা চেনে না এমন তো নয়। কলা দেখলে তো সে ঠিকই চিনতে পারে এবং গব গব করে খায়। তাহলে সমস্যাটা কোথায় এখানে? আমাদের ফরাসি-ভাষী ‘কলা’ কথাটা শুনে কিছুই বুঝতে পারছে না কেন? বুঝতে পারছে না এ জন্যে যে ফরাসি-ভাষীর মস্তিষ্কে কলার যে দ্যোতিতটি আছে তার সাথে বাংলাভাষার দ্যোতক ‘কলা’’র কোনো সম্পর্ক কখনও সৃষ্টি হয়নি। ফরাসি-ভাষীর মস্তিষ্কে কলার যে দ্যোতকটি আছে তার সাথে ফরাসি ভাষার দ্যোতক Banane (উচ্চারণ:বানান)-এর সংযোগ আছে। একই ভাবে বাংলাভাষীর মস্তিস্কে থাকা কলার দ্যোতিতের সংযোগ আছে বাংলাভাষার দ্যোতক ‘কলা’’র সাথে। সুতরাং Banane হচ্ছে ফরাসি ভাষার সঙ্কেত, ‘কলা’ হচ্ছে বাংলা ভাষার সঙ্কেত। আলাদা আলাদা ভাষা মানে আলাদা আলাদা অনেকগুলো সঙ্কেতের সমষ্টি।

এবার আমরা অন্য একটি চিহ্ন নিয়ে আলোচনা করব। সিনেমাহলে, ক্লাসরুমে বা সেমিনার কক্ষে বৃত্তের মধ্যে সিগারেটের উপর আড়াআড়ি দাগ দেওয়া একটি ছবি দেখা যায়। এই ছবিটিতে সিগারেটের অবিকল প্রতিরূপ নেই। কিন্তু এই ছবি দেখে আপনি বোঝেন যে সিনেমাহলে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। সুতরাং এটি একটি দ্যোতক। এই দ্যোতকটির সাথে কোনো বিশেষ স্থানে সিগারেট না খাওয়ার কমবেশি সাদৃশ্য আছে কিন্তু প্রতিমার মতো পুরোপুরি সাদৃশ্য নেই। আর একটি উদাহরণ দেয়া যাক। পৃথিবীর অনেক দেশেই বিদ্যুতের খুঁটি, জেনারেটর, মিটার ইত্যাদির উপর আড়াআড়ি দুই হাড়ের উপর মাথার খুলির একটি ছবি দেখা যায় N। এই ছবি দেখে আপনি বোঝেন যে এই খুঁটি, মিটার বা জেনারেটর থেকে বিপদের আশঙ্কা আছে। এই দ্যোতকটির সাথে মৃত্যু বা বিপদের কমবেশি সাদৃশ্য আছে মাথার খুলির কারণে, কিন্তু প্রতিমার মতো পুরোপুরি সাদৃশ্য নেই। যদি কোনো দ্যোতকের সাথে দ্যোতিতের কমবেশি সাদৃশ্য থাকে তবে সেই চিহ্নটিকে আমরা বলব আমরা ‘প্রতীক’ (Symbol)। হাড়ের উপর খুলির ছবি একটি প্রতীক। ‘গোল বৃত্তে ক্রস দেয়া সিগারেট’ একটি প্রতীক। এ রকম বহু প্রতীক ব্যবহৃত হয় আমাদের নিত্য দিনের জীবনে।¯হচ্ছে সঙ্গীতের প্রতীক,Ûহচ্ছে বৃষ্টির প্রতীক।

প্রতিমার মতোই প্রতীকের একটি সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা আছে। যে কোনো ভাষাভাষী ব্যক্তি যেমন কলার ছবি দেখে ‘কলা’ চিনতে পারে তেমনি কলার প্রতীক দেখেও মস্তিষ্কে ‘কলা’র দ্যোতিত সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। কিন্তু ‘সঙ্কেত’ কোনোমতেই সার্বজনীন চিহ্ন নয়। সি.আই.এ’র গুপ্তচর কে.জি.বি’র সঙ্কেত সাধারণত বুঝতে পারে না। যখন কোনো দরজার উপর বাংলায় লেখা থাকে ‘প্রসাধন’ তখন কোনো ফরাসিভাষীর বোঝার সাধ্য নেই যে দরজাটি টয়লেটের। এর কারণ, ‘প্রসাধন’ কোনো প্রতিমা বা প্রতীক নয়, এটি একটি সঙ্কেত।

ভাষাসৃষ্টির সূচনাপর্বে কথ্য ভাষার ধ্বনিদ্যোতকগুলোর সাথে এগুলোর দ্যোতিতের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল কিনা অর্থাৎ এগুলো প্রতিমা জাতীয় চিহ্ন ছিল কিনা তা আজ হাজার বছর পরে নির্ধারণ করা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু এটা জানা গেছে যে লিখিত ভাষার অন্যতম উপাদান ‘বর্ণ’ প্রতিমা ও প্রতীক জাতীয় চিহ্ন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। গ্রীক আলফা, আরবি আলিফ বা বাংলার ‘স্বরে-অ’ তিনটি বর্ণেরই মূল হচ্ছে একটি সুমেরীয় বর্ণ যা তৈরী হয়েছিল গরুর মাথার আদলের অনুকরণে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষা লেখা হত চিত্রলিপিতে। ‘খোকা কলা খায়’ বাক্যটি লিখতে এই লিপিতে, ধরা যাক, ‘একটি শিশু’, ‘একটি কলা’ আর একটি ‘হা-করা মুখ’ ব্যবহার করা হত। সুতরাং এটি ছিল একান্তই একটি ‘প্রতিমালিপি। এই প্রতিমালিপি বিবর্তিত হয়ে হাজার খানেক বছর পরে সৃষ্টি হয় কীলক লিপি। কীলক লিপির দ্যোতকগুলোর সাথে নির্দেশিতের সাদৃশ্য ছিল বটে কিন্তু চিত্রলিপির তুলনায় এই সাদৃশ্য ছিল অনেক কম। কীলক লিপিকে বলা যেতে পারে ‘প্রতীকলিপি’। এই কীলকলিপি জাতীয় কোনো লিপি থেকেই সম্ভবত প্রাচীন সুমেরিয়দের হাতে বর্ণমালা বা সঙ্কেত লিপি উদ্ভাবিত হয় এবং ধীরে ধীরে এই লিখনপদ্ধতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায়। এই বিবর্তন অবশ্য সব দেশে সমানভাবে হয়নি। দূরপ্রাচ্যের দেশ চীন ও জাপানে এখনও প্রতীকলিপিতে ভাষা লিখিত হয়। জাপানি ভাষা লিখতে প্রতীকলিপি (কাঞ্জি) ও সঙ্কেত লিপি (হিরাগানা ও কাতাকানা) এই দুইই ব্যবহৃত হয়। তবে কাঞ্জি একটি বিশেষ ধরনের প্রতীক। সাধারণ প্রতীকের তুলনায় কাঞ্জির সঙ্গে এর নির্দেশিত বস্তুর সাদৃশ্য অনেক কম। চিহ্ন হিসেবে কাঞ্জি সংকেতের কাছাকাছি কিছু।

চলবে—

The post সেমিওলজি ও ঈশ্বর-প্রথম পর্ব appeared first on Bangladesh Study Forum.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 29

Trending Articles